দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

আসন ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার

fec-image

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুরু হতে কয়েকমাস বাকি রয়েছে। এরই মাঝেই নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ভেতরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমনটা জায়েছে ইসি। এতে সংসদ নির্বাচন ঘিরে শুরু হয়েছে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। জাতীয় সংসদের ২৯৪ নম্বর সংসদীয় আসনটি হচ্ছে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন। সম্ভাব্য প্রার্থীসহ নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে এখানে। তবে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা, যিনি সবসময় সুখে-দুঃখে মাঠে ময়দানে অতীতেও ছিলেন, ভবিষ্যতেও দেখা মিলবে এমন যোগ্য প্রার্থীকে তারা মনোনীত করে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করবেন। তবে শেষপর্যন্ত অপেক্ষার প্রহরে রয়েছেন চকরিয়া-পেকুয়া নির্বাচনী এলাকায় নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল কিংবা অন্যান্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে কে কে লড়ছেন তা এখন দেখার বিষয়।

এ আসন থেকে ১৯৯১ সালে জামায়াত প্রার্থী এনামুল হক মঞ্জু ও ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) ও বর্তমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদ পর পর দু’বার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সালাহউদ্দিন আহমদ কারাবন্দি থাকায় তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে ভারতের শিলংয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সেখানে বেকসুর খালাস পাওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আইনি জটিলতা না থাকলে তিনি নিজেই চকরিয়া-পেকুয়া আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। আর তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার সহধর্মিণী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন, এটি অনেকটা নিশ্চিত।

বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী ও কক্সবাজার জেলা জাপার আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি জাফর আলমকে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোটের আসন ভাগাভাগি করার ফলে ভোট গ্রহণের দু’দিন আগে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন জাফর আলম।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ১৯৭৩ এর নির্বাচনে ডা. শামসুদ্দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে এ আসনে জিতেছিলেন। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে ৪৩ বছর পরে এই আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম। বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম ছাড়াও চকরিয়া-পেকুয়া আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠ রয়েছেন আরো ৪ প্রভাবশালী নেতা। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম সজিব, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য রাশেদুল ইসলাম রাশেদ। তবে তাদের মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬ সালে তিনবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। কিন্তু একবারও জয়লাভ করতে পারেননি ।

দুই বড় দলের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এই আসনে আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) দলীয় সমর্থিত প্রার্থী সাবেক এমপি হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত নির্বাচন হলে এবারো তিনি আসনটি পাবেন বলে ধারণা জাপা নেতাকর্মীদের। অন্যদিকে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক জেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এএইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ এবং ওয়ার্ককার্স পার্টি হাজী আবু মো. বশিরুল আলম নির্বাচন করবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

এ আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক এনামুল হক মঞ্জু দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তারা জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে মনোনয়ন না পাওয়ায় আর কোনও নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে জামায়াতে ইসলামের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিষিদ্ধ হওয়ার পরও এই দলটির নেতাকর্মীরা থেমে থাকেননি। তারা নিরবে কর্মী সংগ্রহসহ দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে না পারলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন যেকোনও একজন। কিন্তু ইতোমধ্যে এ আসনে জামায়াত ইসলামীর কক্সবাজার শহর শাখার আমীর সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল্লাহ আল ফারুককে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা পর থেকে চকরিয়া পেকুয়ার বিভিন্ন জনপদে সামাজিক ও সাংগঠনিকভাবে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ জননেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম সজিব বলেন, আল্লাহর হকুম হলে, নেত্রী যদি যোগ্য মনে করেন, আমাকে একবার সুযোগ দেন পুরো চকরিয়া-পেকুয়াকে তারুণ্য ও মেধা নির্ভর একটি স্মার্ট এলাকায় পরিণত করব। চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু বলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলমের বিকল্প নেই। সত্যিকারের তিনি একজন মাঠের ত্যাগী কর্মী। দীর্ঘ ৪৩ বছর পরে নৌকা প্রতীক নিয়ে চকরিয়া-পেকুয়ার আসনটি জাফর আলমের মাধ্যমে বিজয় লাভ করেছে। তাছাড়া রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে যিনি সরকার বিরোধী পক্ষকে দমন করেছেন তাকে আবারো মনোনয়ন দেওয়ার জন্য নেত্রীর প্রতি আহবান জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন