টেকনাফে হেলিপেড-রাডার স্টেশন স্থাপন হচ্ছে, ৫ শতাধিক পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে

fec-image

ফাতেমা খাতুন, খতিজা বেগম, আব্দুর রহিম ও শাকের মোহাম্মদ। কেউ বন জায়গির, কেউ ব্যাস্তুচ্যুত পরিবার আবার কেউ ভূমিহীন। যারা যুগের পর যুগ বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছেন। টেকনাফ গেম রিজার্ভ এলাকায়। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এরা গড়ে তুলেছে সুপারি বাগান, পানের বরজ ও বিভিন্ন ফলদ গাছ। এসব বাগান ও গাছ থেকে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে জীবন কাটাচ্ছে তারা। এভাবেই এখানের কয়েক”শ বন বিভাগের জমিতে বসতি গড়ে তুলেছে শত শত পরিবার।

সুখে শান্তিতে কাজকর্ম করে তারা দিনাতিপাত করছে। এমন সময় খবর পৌঁছে তাদের কাছে এসব জমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। তাই আতংক ভর করছে এসব পরিবারে। যদিও বা বন বিভাগ বলছে উচ্ছেদ বিষয়ে তারা কিছু জানেননা। টেকনাফ বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ” সংরক্ষিত বনাঞ্চলর বন পাহাড়, পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস করে কোন স্হাপনা করার সুযোগ নেই। টেকনাফ গেম রিজার্ভ এলাকায় কোন ধরনের স্হাপনা গড়ে উঠবে এমন প্রস্তাবনা আমার জানা নেই।”

তবে টেকনাফ ভূমি অফিস সুত্রে জানা যায়, টেকনাফে প্রায় ৭৫ একর জায়গায় সরকার হেলিপেড, রাডার স্টেশনসহ বিভিন্ন স্হাপনা গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জায়গা খুঁজছে। তবে যেখানেই এসব স্হাপনা তৈরি করার আগে জনস্বার্থের বিষয়টি আগে বিবেচিত হবে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: কামরুজ্জামান বলেন ” কক্সবাজার ভূগোলীক ভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তা ছাড়া সরকার এখানে প্রচুর ম্যাগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সবমিলিয়ে এখানে হেলিপেড বা রাডার স্টেশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে জনগণ যাবে ব্যাস্তুচ্যুত না হয়, উপার্জনক্ষম না হয় সেই দিক বিবেচনায় নিতে হবে। ”

টেকনাফ উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ডের মিঠাপানিরছড়া এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়,” এটি টেকনাফ রিজার্ভ মৌজার সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এখানের জমিতে বসবাস করছে শত শত পরিবার। গড়ে উঠেছে মসজিদ, মাদ্রাসা। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ, রয়েছে দোকান পাট ও গ্রামীণ রাস্তা। জমিতে বসতি স্থাপন ও শতশত প্রজাতির গাছপালা রোপন করে বাগান করা হয়েছে ।

সৃজিত সুপারি বাগান ও বিভিন্ন ফলদ বাগান থেকে উৎপাদিত ফসলাদি বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন জানান ওই এলাকার অধিবাসী আব্দুর রহিম ও শাকের মোহাম্মদ। তারা জানান, “এখানের ৫ শতাধিক পরিবার উচ্ছেদ আতংকে ভুগছে। যুগের পর যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় বসতি স্থাপন করে, বিভিন্ন বাগান ও ফলদ গাছ রোপন করেছি। বাগানের সুপারি, পান সহ উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছি। কোনদিন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি সরকার হেলিপেড, রাডার স্টেশনসহ একাধিক স্হাপনা নির্মাণ করবে বলে জানা যায় । আর এটি বাস্তবায়ন করা হলে শতশত পরিবার বাস্ত্যুচুত হবে। উপার্জনক্ষম হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বো। “

উচ্ছেদের ভয়ে তাদের আশ্রয়, আয় রোজগার ও ঘরবাড়ি, রোপিত গাছ, বাগান হারানোর ভয়ে আতংকগ্রস্হ হয়ে পড়েছে এসব পরিবার গুলো।

১৭ জুলাই সোমবার দুপুরে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) “র মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন এলাকাবাসী।
দরখাস্তে সাবেক ইউপি সদস্য আহমেদ হোসেনসহ শতাধিক লোকজন স্বাক্ষর করেছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ” তারা যুগ যুগ ধরে বংশ পরিক্রমায় টেকনাফ রিজার্ভ মৌজার জমিতে বসবাস করে আসছে । বসতি স্থাপন ও শতশত প্রজাতির গাছপালা রোপন করে বাগান গড়ে তোলা হয়েছে । বন জায়গির হিসেবে প্রকৃতি, পাহাড় বন সুরক্ষা করে আসছে অনেকে। জমিতে গ্রামীন রাস্তা ঘাট মসজিদ-মক্তব ও বিদ্যুৎ সংযোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান তাতেই সুখে শান্তিতে আমরা বসবাস করে আসছি। “

স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রশিদ মিয়া জানান , ” আমাদের জীবন জীবিকার একমাত্র ঠিকানায় সরকারী স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। হেলি পেড, রাডার স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনার জন্য প্রায় ১০০ (এক শত) একর টেকনাফ সংরক্ষিত বনাঞ্চল (গেম রিজার্ভ বন এলাকা) অধিগ্রহন করার জন্য প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে প্রকল্পটি স্থাপিত হলে ৫শতাধিক প্রতিষ্ঠিত পরিবার বাষচ্যুত হয়ে উপার্জনের পথ হারাবে। অন্য কোথাও সরকারের প্রয়োজনীয় স্থাপনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে বসত বাড়ি ও সৃজিত বাগান রক্ষা পাবে। অন্যথায় শতশত পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয়হীন, ভূমিহীন ও কর্মহীন হয়ে চরম আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও দূর্ভোগে পড়বে

দরখাস্তের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রী, স্হানীয় সরকার মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম ।

তিনি জানান, ” ৫ শতাধিক পরিবার বন বিভাগের জমিতে যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাসরত রয়েছেন। তারা সুপারি বাগান, পানের বরজ ও বিভিন্ন জলজ গাছ লাগিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।” তাদের আশ্রয়, উপার্জন, পরিবেশ ও সমূহ আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির নিরসন বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। “

এ বিষয়ে স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন,”এ বিষয়ে জনস্বার্থে সদয় বিবেচনা পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন জরুরি। “

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ” এলাকায় বসবাসকারী লোকজন কতৃক দেওয়া দরখাস্ত যথাযথ প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। “

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উচ্ছেদ, টেকনাফ, পরিবার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন