বান্দরবানে জেএসএসের সন্ত্রাসীদের হুমকিতে এলাকা ছাড়া ৭০ উপজাতি পরিবার
স্টাফ রিপোর্টার:
বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে জেএসএস অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে ৭০ পাহাড়ী পরিবার ঘরছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযান করছে। সন্ত্রাসীদের আটক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবীতে রবিবার বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।
সূত্র জানায়, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রোয়াংছড়ি উপজেলার তরাছা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ায় গত মঙ্গলবার জনসংহতি সমিতি সমর্থিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বিমল চাকমা (৩০) তার অপর দুই সহযোগীর মধ্য চাঁদার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে মারপিট হয়। মারপিটে বিমল চাকমাকে মৃত ভেবে তারা পালিয়ে যায়। এঘটনায় বিমলের সহযোগীরা পাড়ায় আক্রমনের খবর পেয়ে পাড়াবাসী আতংকিত হয়ে জেলা সদরের কয়েকটি হোটেলে ও আত্মীয় স্বজনের বাসায় আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ ও সেনা বাহিনী বিমল চাকমাকে মুমর্ষ অবস্থায় অস্ত্রসহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশ তার সহযোগী তিনজনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে।
এদিকে রোববার জেএএসের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এসময় বিভিন্ন ফেস্টুন, প্লাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ নেয় কয়েকশ নারী পুরুষ। এসময় বক্তারা পাহাড়ে জেএএসের সন্ত্রাস ও চাঁদা আদায় বন্ধ ও অপহৃত আওয়ামী লীগ নেতা মং প্রু মার্মাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানানো হয়।
সমাবেশে পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ক্যসা প্রু ফিলিপ ত্রিপুরা, মং প্রু কারবারীসহ স্থানীয় পাহাড়ী নেতারা বক্তব্য রাখেন।
নির্যাতন,হত্যার হুমকি আর সহ্য করতে পারছি না, তাই ছেলে মেয়ে নিয়ে পাড়া ছেড়ে বান্দরবান শহরে চলে এসেছি, কখন নিজ পাড়ায় ফিরতে পারবো জানি না। তালুকদার পাড়া থেকে পালিয়ে আসা পাড়াবাসী এসব কথা বলেছেন।
তালুকদার পাড়ার কারবারি (পাড়া প্রধান) মং প্রু মার্মা জানান, দীর্ঘ পনের বছর ধরে জেএসএস অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে পাড়ায় আশ্রয় দিয়ে এসেছি। ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সন্ত্রাসীরা পাড়ার যুবকদের প্রায় সময় মারধর করলে পাড়াবাসী প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এরপর থেকে এলাকা ছাড়া হয়ে পাড়াবাসী হোটেল ও আত্মীয় স্বজনদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এলাকায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
ভালো করে ভাত খেয়ে নে, সময় মতো তোকে নিয়ে যাবো, তোকে না পাইলে তোর ছেলে বা মেয়েকে নিয়ে যাবো বলে সন্ত্রাসীরা প্রতিদিনই প্রাণনাশের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকার উহ্লামং মারমা জানান।
তারাছা ইউপি চেয়ারম্যান উথাইচিং বলেন, জেএসএস এর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাদের নিজেদের ভাগভাটোয়রার অন্তকোন্দলে বিমল চাকমা আহত হন। এত দোশ হয় পাড়াবাসীর। তাদের হুমকিতে ৭০ পরিবার পাড়া ছাড়া হয়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছে। জীবনের নিরাপত্তার সার্থে এলাকায় স্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা না আমরা পাড়ায় ফিরবনা।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, পাহাড়ে হত্যা, গুম ও চাঁদাবাজ ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আটক করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তালুকদার পাড়াবাসীদের নিরাপত্তার মাধ্যমে পাড়ায় ফিরে নেয়ার উদ্যাগ নেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, তালুকদার পাড়া বাসীরা যাতে নিরাপত্তায় থাকতে পারে আমরা সে উদ্যোক নিচ্ছি। এছাড়া অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আটক করতে যৌথ বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত গত ১৩ জুন জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার জামছড়ি মুখ পাড়া থেকে অস্ত্রধারীরা সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সদস্য মং পু মার্মাকে অপহরণ করে এবং গত মঙ্গলবার সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে ঘরবাড়ি ছেড়ে একই উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়া থেকে ৭০টি পরিবার জেলা শহরে আশ্রয় নেয়।