রাঙামাটি জেলা পরিষদ শিক্ষাবৃত্তির ৩৩.২৩ শতাংশ পেয়েছে বাঙালিরা

fec-image

জেলা পরিষদ প্রকাশিত তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাকমা ২২৬ (৩৪.৭৭%), মারমা ৮৬ (১৩.২৩%), তঞ্চঙ্গা ৪৫ (৬.৯২%), ত্রিপুরা ২১ (৩.২৩%), পাংখুয়া ৪৯ (৭.৫৪%), বম ৩ (০.৪৬%) খিয়াং ১ (০.১৫%), আসাম ১ (০.১৫%), রাখাইন ১ (০.১৫%), চাক ১ (০.১৫%) এবং বাঙালি ২১৬ (৩৩.২৩%)।

সম্প্রতি রাঙামাটি জেলা পরিষদের শিক্ষা উপবৃত্তি ২০২৩-এর তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এইচএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জেলার ৬৫০ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করেছে জেলা পরিষদ। তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাঙালি ২১৬ জন, যা মোট বৃত্তির ৩৩.২৩ শতাংশ, অন্যদিকে অবাঙালি তথা বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থী আছেন ৪৩৪ জন, যা মোট বৃত্তির ৬৬.৭৭ শতাংশ। বিষয়টিকে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট আইন এবং শান্তিচুক্তির সাথে ভারসাম্যপূর্ণ দাবি করা হলেও বাঙালি নেতৃবৃন্দ এটাকে তাদের সাথে চরম বৈষম্য বলে উল্লেখ করেছেন। পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন এবং শান্তিচুক্তিতে এমন কোনো আইন বা বাধ্যবাধকতা নেই বলে দাবি করেছেন তারা।

জেলা পরিষদ প্রকাশিত তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাকমা ২২৬ (৩৪.৭৭%), মারমা ৮৬ (১৩.২৩%), তঞ্চঙ্গা ৪৫ (৬.৯২%), ত্রিপুরা ২১ (৩.২৩%), পাংখুয়া ৪৯ (৭.৫৪%), বম ৩ (০.৪৬%) খিয়াং ১ (০.১৫%), আসাম ১ (০.১৫%), রাখাইন ১ (০.১৫%), চাক ১ (০.১৫%) এবং বাঙালি ২১৬ (৩৩.২৩%)।

২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে রাঙ্গামাটি জেলার মোট জনসংখ্যা ৬৪৭৫৮৭ জন। এর মধ্যে বাঙালি ২৭৪৭২৩ (৪২.৪২%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৩৭২৮৬৪ (৫৭.৫৮%) জন। জনসংখ্যানুপাতে বৃত্তি সংখ্যা বণ্টিত হলে বাঙালি শিক্ষার্থীরা মোট বৃত্তির অন্তত ৪২ দশমিক ৪২ শতাংশ পাওয়ার কথা, সেটি না হওয়ার কারণেই বিষয়টিকে নিজেদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে দেখছে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ নেতৃবৃন্দ।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা সভাপতি মো. হাবীব আজম পার্বত্যনিউজকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিগুলোর মধ্যে চাকমাদের শিক্ষার হার ৯০ শতাংশের ওপরে। অন্যান্য নৃগোষ্ঠির শিক্ষার হারও অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু পার্বত্য বাঙালিদের শিক্ষার হার ২২ থেকে ২৪ শতাংশের বেশি না। তাই অনগ্রসর হিসেবে যেখানে বাঙালি শিক্ষার্থীরা বৃত্তি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ পাওয়ার কথা, সেটা না করে জনসংখ্যানুপাতে শিক্ষা বৃত্তিতে আমাদের প্রাপ্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ। আমি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষা উপবৃত্তি-২০২৩ প্রদানে বাঙালি শিক্ষার্থীদের সাথে এই বৈষম্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনগ্রসর বাঙালিদের সাথে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন:

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শিক্ষা বৃত্তিতে বৈষম্যের শিকার বাঙালিরা
এইচএসসির ফলাফলে সবচেয়ে পিছিয়ে খাগড়াছড়ি, এগিয়ে বান্দরবান
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণ: আলোচনা থাকলেও গতি নেই উদ্যোগ ও বাস্তবায়নে
জনশুমারি ২০২২: পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমিতি বিশ্লেষণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের (পিসিএনপি) সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান পার্বত্যনিউজকে বলেন, ‘এটা বাঙালিদের সাথে একটা বিশাল বৈষম্য। আর এই ধরনের বৈষম্য থেকেই কিন্তু মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়, আন্দোলন গড়ে ওঠে। আমরা কিন্তু সে কারণেই আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমরা চাই শিক্ষাবৃত্তি, চাকরি, উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তির সুযোগসহ সকল ক্ষেত্রে জনসংখ্যানুপাতে প্রত্যেক জনগোষ্ঠি তাদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদের বেলায় সেটা হচ্ছে না বলেই এখানে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচন না থাকার কারণে এখানে যারা আছেন জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতাও নেই। সে কারণে তারা এই বৈষম্যগুলো করে যেতে পারছে। কিন্তু এটা চলতে পারে না। শিক্ষাবৃত্তিসহ সব ক্ষেত্রে বাঙালিদেরকে তাদের প্রাপ্য সাংবিধানিক সমঅধিকার অবশ্যই দিতে হবে।’

রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য এবং শিক্ষা উপবৃত্তি কমিটির আহ্বায়ক প্রিয়নন্দ চাকমা পার্বত্যনিউজকে জানান, ‘এখানে কোনো বৈষম্য করা হয়নি। আগে থেকে যেভাবে শিক্ষাবৃত্তি বণ্টন করা হতো, এবারো তাই করা হয়েছে।’

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী পার্বত্যনিউজকে বলেন, ‘আমরা এটা জনসংখ্যানুপাতে বণ্টন করিনি। আমরা করেছি জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী। জেলা পরিষদ আইনে ৩০ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন বাঙালি সদস্য থাকার কথা বলা হয়েছে। শান্তিচুক্তিতেও এটা আছে। সেই বিবেচনায় বাঙালি শিক্ষার্থীদের মোট বৃত্তির তিন ভাগের এক ভাগ হিসাব করে দেওয়া হয়েছে।’

তবে জেলা পরিষদ আইন এবং শান্তিচুক্তির সংশ্লিষ্ট বিধান এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে মনে করেন পিসিএনপি সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো যৌক্তিক কথা নয়। সেখানে বলা হয়েছে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা কোন জনগোষ্ঠি থেকে কত জন হবে সে ব্যাপারে। কিন্তু তাই বলে শিক্ষাবৃত্তি, চাকরিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটা মানতে হবে, সেটা জেলা পরিষদ আইন এবং শান্তিচুক্তির কোথায় বলা আছে? আমি বান্দরবান জেলা পরিষদে দুই মেয়াদে সদস্য ছিলাম। তখন শিক্ষাবৃত্তি এবং চাকরির ক্ষেত্রে বাঙালিরা ৫১ শতাংশ সুযোগ পেয়েছে, কারণ সেখানে বাঙালির সংখ্যা বেশি। তখন তো জেলা পরিষদ আইন এবং শান্তিচুক্তি কোনো বাধা হয়নি। তাহলে এখন কেন হচ্ছে? আসল বিষয় হচ্ছে এখানে বাঙালিদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, এবার রাঙামাটি জেলা পরিষদের শিক্ষা উপবৃত্তি হিসেবে এইচএসসিতে ১৫০ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ৭ হাজার করে ১০ লাখ ৫০ হাজার, ৭০ জন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ৭ হাজার করে ৪ লাখ ৯০ হাজার, ৯০ জন স্নাতক শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ১০ হাজার করে ৯ লাখ, ১৬০ স্নাতক (সম্মান) শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ১০ হাজার করে ১৬ লাখ, ৯০ জন মেডিক্যাল/প্রকৌশল/কৃষি/মৎস্য শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ১২ হাজার করে ১০ লাখ ৮০ হাজার এবং ৯০ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ১২ হাজার করে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা এককালীন বৃত্তি হিসেবে প্রদান করা হবে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬৫০ শিক্ষার্থীকে সর্বমোট ৬২ লাখ টাকার শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

আরও পড়ুন:

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন সংখ্যা ন্যায়সঙ্গত করা হোক

বাবু চুনীলাল দেওয়ানের স্ত্রী রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিলেন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বাঙালি, রাঙামাটি জেলা পরিষদ, শিক্ষাবৃত্তি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন