রামুতে উপজেলা চেয়ারম্যান উপ-নির্বাচন প্রার্থী নির্ধারণ করতে পারেনি আওয়ামীলীগ ও বিএনপি

10814324_718820331547080_1935918422_n

রামু প্রতিনিধি:
রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে এখনো নিজেদের প্রার্থী নির্ধারণ করতে পারেনি বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি। অন্যদিকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াত সমর্থিত সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান। তপশীল ঘোষণার পর থেকেই তিনি গণসংযোগসহ নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন।

গত ১৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা হয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৫ নভেম্বর। ঘোষিত তফশীল মতে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আছে মাত্র ১দিন। এরপরও দলের পক্ষে নির্বাচনে প্রার্থীতা চূড়ান্ত না হওয়ায় বড় দুটি দলের সমর্থকরা হতাশ। এ নিয়ে অনেক নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। তবে প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে সবচেয়ে বেশী জটিলতায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এছাড়া বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নির্ধারণে বিলম্ব হলেও তেমন জটিলতা নেই বলে জানিয়েছেন, উপজেলা নেতৃবৃন্দ।

এদিকে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মরহুম আহমেদুল হক চৌধুরীর সহধর্মিনী আনোয়ারা বেগম, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সমর্থন পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার বিষয়টি এতদিন দলীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। শেষ মূহুর্তে দলীয় মনোনয়নে এগিয়ে রয়েছেন, মরহুম আহমেদুল হক চৌধুরীর বড় ছেলে মেরাজ আহমেদ মাহিন। বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্র মেরাজ আহমেদ মাহিনের প্রতিদ্বন্ধিতার ব্যাপারটি নিশ্চিত বলে জানিয়েছে।

এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সাথে দফায়-দফায় বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন, রামু-কক্সবাজার আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল।

রবিবার বিকাল ৩টায় কক্সবাজার নিরিবিলি অর্কিডস্থ সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজলের বাসভবনে প্রার্থী নির্ধারণে কক্সবাজার জেলা ও রামু উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের রুদ্ধধার সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে ৪ জনকে প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়।

এরা হলেন, মরহুম আহমেদুল হক চৌধুরীর বড় ছেলে মেরাজ আহমেদ মাহিন, স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, রামু উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম ফেরদৌস ও সদস্য সচিব গোলাম মাওলা। সভায় সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল, জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নাসহ জেলা ও রামু উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি‘র সভাপতি মরহুম আহমেদুল হক চৌধুরীর সহধর্মিনী আনোয়ারা বেগম জানিয়েছেন, পারিবারিক ও দলীয় সিদ্ধান্তে তার বড় ছেলে মেরাজ আহমেদ মাহিন উপ-নির্বাচনে অংশ নেবে।

রবিবার মোবাইল ফোনে মেরাজ আহমেদ মাহিন জানিয়েছেন, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, বাবার প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতিদান দিতেই তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। নির্বাচিত হলে সততার সাথে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেকে জনগণের সেবায় উৎসর্গ করবেন।

এছাড়াও চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, রামু উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম ফেরদৌস ও সদস্য সচিব গোলাম মাওলাসহ একাধিক নেতা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে জটিলতা। রামুর রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের রয়েছে স্বর্ণোজ্জল ইতিহাস। বিগত কয়েকটি সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে এ ইতিহাসের পূণরাবৃত্তি দেখেনি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিগত উপজেলা নির্বাচনের মতো এবারো অভ্যান্তরীণ কোন্দলের জের ধরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে দলটির একাধিক নেতাকর্মী। এদিকে উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে রবিবার রামুতে পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাত ৯ টায় জোয়ারিয়ানালা অবকাশ নামক একটি কমিউনিটি সেন্টারে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে সভা আহ্বান করেন, রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় প্রচার কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এটা শতভাগ নিশ্চিত। এ সভায় যাদের নাম আসবে কেবল তাদের তালিকা জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক গঠিত প্রার্থী মনোনয়ন কমিটির কাছে পাঠানো হবে। কমিটি যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে অনেকের নাম আলোচনায় আসে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাফর আলম চৌধুরী, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুসরাত জাহান মুন্নী, সাবেক ছাত্রনেতা সালাহ উদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা তারেক সরওয়ার।

বড় দুই দল প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটালেও তপশীল ঘোষণার পরপরই প্রচারণায় নেমে পড়েছেন, রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ফজলুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান। তিনি চলতি বছর ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন । ওই নির্বাচনে তিনি ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। মোহাম্মদ হাসান জানিয়েছেন, এবার জয়ের লক্ষ্য নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এদিকে রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে ঘোষিত তফশিল অনুযায়ি ২৫ নভেম্বরের মধ্যে (সকাল ৯টা হতে বিকাল ৫টা) জেলা রিটার্নিং অফিসার এবং রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। রিটার্নিং অফিসার কৃর্তক মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৬ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩ ডিসেম্বর। ৪ ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ ডিসেম্বর।


উল্লেখ্য গত ১১ আগস্ট রামুর উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান আহমেদুল হক চৌধুরীর ভারতের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। ফলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন