আলীকদমে আইসিডিপি’র প্রকল্প সমন্বয়কের বিরুদ্ধে পাড়াকর্মীদের অভিযোগ
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি:
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদমে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প (আইসিডিপি) এর উপজেলা প্রকল্প সমন্বয়কের (ইউপিএম) বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাড়াকর্মীদের অশ্লীল প্রস্তাব দেয়াসহ বেতনভাতা থেকে উৎকোচ আদায় ও চাকুরিচ্যুতির ভয় দেখানোর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রকল্প পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৪১ জন পাড়াকর্মী। অভিযোগপত্রে, ইউপিএম কর্তৃক পাড়াকর্মীদের নিকট হতে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।
প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত আইসিডিপি’র প্রকল্প সমন্বয়ক (ইউপিএম) ওয়াসিল মো. রায়হান দীর্ঘদিন ধরে পাড়াকর্মীদের বেতন ভাতা থেকে উৎকোচ আদায়, চাকুরিচ্যুতির ভয়, আর্থিক হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। ইতিপূর্বে জনৈকা পাড়াকর্মীকে অশ্লীল প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি!
ইউপিএম এর অন্যায় কাজের সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের পিও প্রীতিরঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা। ইউপিএম ও পিও যোগসাজশ করে পাড়াকর্মীদের বেতন ভাতা ও বোনাস থেকে প্রতিমাসে নানা ফন্দিতে উৎকোচ আদায় করে আসছেন।
৪১ জন পাড়াকর্মীর স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রের ১নম্বরে স্বাক্ষরকারী শিউলী বড়ুয়া সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমাদের করা অভিযোগে কোন মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়নি। যা সত্য তা অভিযোপত্রে আছে। আমরা অভিযোগের বিষয়ে ডিপিএম এর সাথে সাক্ষাত করেছি। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন’।
ইউপিএম কর্তৃক পাড়াকমীদের অশ্লীল প্রস্তাবের বিষয়ে পাড়াকর্মী পারুল আক্তার বলেন, জনৈকা পাড়াকর্মীকে বোনাস ভাতার নেওয়ার জন্য সন্ধ্যায় অফিসে যেতে বলেছিলেন ইউপিএম রায়হান। মান সম্মানের ভয়ে সে কোথাও অভিযোগ করেনি।
এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সোমবার সন্ধ্যায় ইউপিএম ওয়াসিল মো. রায়হান বলেন, আলীকদমে ১১০ জন পাড়াকর্মীর বেতন ভাতা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। এতে কারো কাছ থেকে টাকা কর্তন করে রাখার সুযোগ নেই। কাউকে আমি অশ্লীল প্রস্তাব দেইনি। তিনি বলেন, আমাদের কিছু পাড়াকর্মীর মান ভাল নয়। এ কারণে গত ডিসেম্বর মাসে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় ইউএনও স্যার পাড়াকর্মীদের মান যাচাইয়ে একটি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবের কথা জানতে পেরে কতিপয় পাড়াকর্মী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, চন্দ্রমোহন পাড়ার পাড়াকর্মী থেকে ৫ হাজার ৫শ’ টাকা, ভারত মোহন পাড়ার পাড়াকর্মী থেকে ৭৫০ টাকা, ছাবের মিয়া পাড়ার পাড়াকর্মী থেকে ২ হাজার ৮শ’ অংথোয়াই কার্বারী পাড়ার পাড়াকর্মী থেকে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা, কলারঝিরি পাড়ার পাড়াকর্মী থেকে ৫ হাজার ৫শ’ টাকা, আকবর আহামদ পাড়ার পাড়াকর্মী থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা, মংচা পাড়ার পাড়াকেন্দ্র-১ এর পাড়াকর্মী থেকে ৩শ’ টাকা, মংচা পাড়া পাড়াকেন্দ্র-২ এর পাড়াকর্মী থেকে ৩শ’ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন অভিযুক্ত ইউপিএম ও পিও। এছাড়াও পাড়াকর্মীদের বেতন ও ক্লাস্টার ভাতা থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা কর্তন করা রাখা হয়েছে।
পাড়াকর্মীদের দাবি, নিয়োগ পাওয়া পাড়াকর্মীদের নিয়োগের নামে নতুন করে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া রহস্যজনক। ইউপিএম মাসের বেশিরভাগ সময় কর্মস্থলে থাকেন না। মাঝেমধ্যে কর্মস্থলে আসলেও পাড়াকর্মীদের সাথে নানা অজুহাতে দুর্ব্যবহার করেন। পাড়া কেন্দ্র ভিজিট না করে দপ্তরে বসেই পরিদর্শন চার্টে মতামত ও স্বাক্ষর দেন ইউপিএম।
জানতে চাইলে জেলা প্রকল্প পরিচালকা পুলুপ্রু মার্মা সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, এ বিষয়ে মুঠোফোনে সব বলা যাবে না। অভিযোগটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর মতামত চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।