আলীকদমে ‘বৈধ’ ডিপোতে জোতের বাইরের কাঠ মজুদের অভিযোগ

BagerhatNews29.07.2013

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি:
পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদমে তৈন রেঞ্জের আওতাধীন ১১১নং অস্থায়ী কাঠের ‘বৈধ’ ডিপোতে জোতের বাইরের কাঠ মজুদের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণাধীন আলীকদম-থানচি সড়কের ১৬ কিলোমিটার এলাকার অশ্রেণীভূক্ত বনাঞ্চল থেকে এসব কাঠ কাটা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অভিযোগ বিচারাধীন থাকাবস্থায় সাড়ে চারশ’ ঘনফুট জোতের বাইরের কাঠ ডিপোতে মজুদ করা হয়েছে।

লামা বন বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও)’র নিকট লিখিত এক অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার বটতলী পাড়ার ওসমান আলীকদম-থানচি রোডের ১৭ কিলোমিটার এলাকায় স্থানীয় কমপ্লেক মুরুংয়ের ভোগদখল থেকে ২৫টি গোদা গাছ ক্রয় করেন। সম্প্রতি ওসমান এ গাছগুলি কর্তন করলে পরিমাণ দাড়ায় ৪৫০ ঘনফুট। তৈন রেঞ্জের ১১১ নং অস্থায়ী কাঠের ডিপোর মালিক ছেনোয়রা বেগম ওসমানের কাটা কাঠগুলি গোপনে এনে আমতলীর চাকলাম কার্বারী পাড়ায় অবৈধ মজুদ করেন। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গাছের মালিকানা নিয়ে ওসমান অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি বিচারাধীন আছে।

ক্রয়সূত্রে গাছের মালিক ওসমান দাবী করেন, তার কর্তিত গাছের মালিক স্থানীয় আদু কার্বারীর ছেলে কমপ্লেক মুরুং। যেখান থেকে গাছ কাটা হয়েছে সেখানে কোন সরকালী হোল্ডিং কিংবা খতিয়ান নেই। তাই গাছ কাটার জন্য সরকারী জোত পারমিট ইস্যু হওয়ারও সুযোগ নেই। অথচ ছেনোয়রা বেগম গাছের মালিকনা দাবী করে বন বিভাগের অনুমোদিত ১১১ নং কাঠের ডিপোতে জোতের বাইরের কাঠগুলি অবৈধ মজুদ করেছেন। ছেনোয়রা বেগম বলেন, গাছগুলি তার মালিকানাধীন। যে জায়গা থেকে গাছ কাটা হয়েছে সে জায়গাটি তার ভোগদলখীয়।

উল্লেখ্য, জোত পারমিটের অজুহাতে স্থানীয় ছেনুয়ারা বেগম আলীকদম-থানচি সড়কে অবৈধভাবে গাছ কেটে চলেছেন মর্মে গত ১৮ আগস্ট স্থানীয় পাড়া প্রধান আদু মুরুং কার্বারীসহ ১৫ জন উপজাতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত দেন। এ নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর ইউএনও অফিসের সার্ভেয়ারের [পত্র নং- কানুন/২০১৩-৫৪(১৬) (ভূমি)] তদন্তকালে অভিযুক্ত ছেনোয়ারা উপস্থিত হননি। তদন্তকালে মুরুংদের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়।

আদু মুরুং কার্বারী অভিযোগ করেন, ছেনুয়ারা বেগম নিজেকে ‘ফরেস্টের মহিলা, মুন্সির বউ’ ইত্যাদি পরিচয়ে স্থানীয় উপজাতিদের ভোগ দখলীয় বাগানের গাছ কেটে নিচ্ছেন। অবৈধভাবে কর্তিত কাঠ জোত পারমিটের আড়ালে তার বাড়ির আঙিনায় স্থাপিত ১১১নং ডিপোতে মজুদ করে থাকেন।

উপজেলা জনসংহতি সমিতি-জেএসএস এর সাধারণ সম্পাদক চাহ্লা মং মার্মা বলেন, পাহাড়ের অশ্রেণীভূক্ত বনাঞ্চলের অধিকন্ত গাছপালা স্থানীয় উপজাতি বাসিন্দারা ভোগ দখল করছেন। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে ছেনোয়ারাসহ কতিপয় ব্যক্তি জোর করেই এসব কাঠ কেটে বন বিভাগ অনুমোদিত কাঠের ডিপোতে মজুত করছেন। এ নিয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করেও সুষ্ঠু প্রতিকার পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে তৈন রেঞ্জে নবনিযুক্ত রেঞ্জ কর্মকর্তার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কর্মস্থলে নতুন। জোতের বাইরের কাঠ ডিপোতে রাখার অনুমতি নেই। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে আইনগত পদক্ষেপ নেবো’।
জানতে চাইলে লামা বন বিভাগীয় কর্মর্কা মুহাম্মদ সাঈদ বলেন, এ বিষয়ে আমার দপ্তরে একটি অভিযোগ এসেছে। যদি অভিযুক্ত ছেনোয়ারা তার ডিপোতে অবৈধ কাঠ মজুদ করে থাকেন, তবে তদন্ত করা হবে। জোতের বাইরের কাঠ প্রমাণিত হলে টিপি সরবরাহ করা হবে না’।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদম, কাঠপাচার, পাচার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন