রুমা-থানচি ব্যাংক ডাকাতির জেরে

নাইক্ষ্যংছড়ির ৬ ব্যাংকে নিরাপত্তা জোরদার, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

fec-image

বান্দরবানের রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির জবান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার জেরে নাইক্ষ্যংছড়ির ৬টি ব্যাংকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) উপজেলা সদর ও বাইশারীতে থাকা ৬টি শাখা ও উপশাখা ব্যাংক ব্যবস্থাপক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা যায়।

ব্যাংকগুলো হলো: সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ২টি। আর উপশাখা ২ এবং অন্যান্য এজেন্ট ব্যাংক ব্যাংকিং ৩টা।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মমতাজ মিয়া জানান, বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনার জেরে তারা চরম আতঙ্কে রয়েছে। কেননা আগের সবগুলো ব্যাংকের অবস্থান ছিলো উপজেলা সদরে। তবুও ডাকাতির ঘটনা ঘটায় তিনি এ আতঙ্কগ্রস্ত হন। তবে সজাগ রয়েছেন। বুধবার দুপুরে পুলিশের কাছ থেকে সহায়তা চেয়ে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, পরপর ২টি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার খবর পেয়ে তার অফিসে ছুঁটে আসেন তার উধ্বর্তন কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে অন্যতম জনতা ব্যাংক কক্সবাজার এরিয়া ম্যানেজার অলক বড়ুয়া।

এরিয়া ম্যানেজার অলক বড়ুয়া পার্বত্যনিউজকে বলেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা পাহাড়ের ব্যাংকিং সেক্টরকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। সবাই আতঙ্কে। সে কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির তাদের ব্রাঞ্চটি দেখতে তিনি ছুঁটে আসেন কক্সবাজার থেকে। আর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের।

নাইক্ষ্যংছড়ি সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হোছাইন মাজমুদ আরাফাত পার্বত্যনিউজকে বলেন, হঠাৎ এমন ঘটনার জন্যে কেউ প্রস্তুত ছিলো না। পাহাড়ে ব্যাংক সেক্টেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে তিনি তার উর্ধ্ব মহলের দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক সব ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন। এখন নিরাপদ। পুলিশ পাহারা রয়েছে।

কৃষি ও জনতা ব্যাংকের কয়েকজন গ্রাহক যথাক্রমে নুরুল হাকিম ও নাছিমা আক্তার পার্বত্যনিউজকে বলেন, রুমা ও থানচিতে ডাকাতির ঘটনার পর নাইক্ষ্যংছড়িতে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তার কারণে তারা দুপুর দেড়টার পর ব্যাংকে এসে টাকা তুলতে পারেনি।ব্যাংকের দরজা দেড়টার পর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ রমজানে ব্যাংকের টাকা লেদ-দেনের সময় দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত খোলা রাখা কথা।

তবে জনতা ব্যাংক ব্যবস্থাপক মমতাজ মিয়া এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, উপজেলায় যে কয়টি শাখা-উপশাখা, এটিএম ও এজেন্ট ব্যাংকিং রয়েছে সবটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশী অতিরিক্ত টহলেও আছে। এখন পর্যন্ত সব প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ও অক্ষত রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, রুমা-থানচিতে ডাকাতি ঘটনার পর ব্যাংক সেক্টরসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্যে তিনি জরুরি বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। নিরাপত্তা, সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করতে সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। তিনি সরেজমিন গিয়ে এসব করেছেন। এখন সবাই সজাগ।

উল্লেখ্য, বান্দরবানের রুমা উপজেলার পর এবার থানচি উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৩ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে জেলার থানচি উপজেলা সদরে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক শাখায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) শতাধিক অস্ত্রধারী সদস্য ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুড়কে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ঢুকে পড়ে। এসময় তারা ভল্ট ভাঙার চেষ্টা চালায়। পরে তারা ভল্ট ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে ক্যাশ বক্সে রক্ষিত টাকাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে মোট ১৮ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বান্দরবানের রুমায় সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা ও ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে বলে খবর পাওয়া যায়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কেএনএফ, বান্দরবান, ব্যাংক ডাকাতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন