নানা সমস্যার কারণে থমকে গেছে পর্যটন শিল্প

পর্যটক হারাচ্ছে বান্দরবান, আশায় প্রহর গুনছেন সংশ্লিষ্টরা

fec-image

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানকে বলা হয় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। জেলায় রয়েছে ছোট বড়সহ অসংখ্য ঝিড়ি-ঝর্ণা। শুধু তাই নয় পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তুলতে রয়েছে নীলাচল, নীলগিরি, দেবতাকুম, আমিয়াকুম, নাফাকুম, সাতভাই কুম, বড় পাথর। তাছাড়া মেঘের সাথে মিতালী বেঁধে ছেয়ে গেছে বগালেক, কেউক্রাডং, ডিমপাহাড়, তাহজিডংসহ আরো অসংখ্যা পাহাড়। কিন্তু এই জেলায় সন্ত্রাসীদের বিরোধী অভিযান, বন্যাসহ নানা কার্যকালাপে কারণের মুখ থুবরে পড়েছে পর্যটন শিল্প। দিন যতই এগোচ্ছে ততই হারাচ্ছে পর্যটক। পর্যটন নগরীতে এমন দুর্দশার ফলে চিন্তার ভাজ পড়েছে পর্যটনখাতে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পর্যটকদের কেন্দ্র করে জেলায় পর্যটন শিল্পের গড়ে উঠেছে ছোট বড় শতশত হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউজ। এছাড়া পরিবহন, রেস্তোরা, হস্তশিল্পের পর্যটনখাতে সাথে গড়ে উঠে অসংখ্য কর্মসংস্থান। এখন পরোক্ষ প্রত্যাক্ষভাবে পর্যটন শিল্প থেকে জেলায় জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ। গেল কয়েকবছর ধরে পাহাড়ের ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা, সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান ও বন্যার সহ বিভিন্ন সমস্যা কারণে কমেছে পর্যটকের সংখ্যা। এতে লোকসানে মুখে পড়েছে পর্যটন খাতে ব্যবসায়ীরা। শুধু পর্যটন ব্যবসায়ী নয় কর্মহীন হয়ে পড়েছে চান্দের গাড়ি চালক ও পর্যটক গাইডরাও।

প্রশাসন তথ্যনুযায়ী, জেলা বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ছুটে চলা চান্দের গাড়ি সংখ্যা রয়েছে ৮শতের অধিক। চালক রয়েছে হাজার খানেক মানুষ। তাছাড়া রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে পর্যটক গাইডের সংখ্যা ছয় শতাধিক। পর্যটন শহরে পর্যটকরা না আসায় সংসারের হাল ধরতে নানান সমস্যা সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ পর্যটকদের আগমন ঘটবে এই নিয়ে প্রহর গুনছে তারা।

পর্যটনশিল্প ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বান্দরবানের নানান সমস্যা সম্মুখীন হওয়ার কারণের দিনদিন পর্যটন শিল্পের ধস নেমেছে। এর আগের পর্যটন শিল্প থেকে প্রায় এক কোটির টাকা লেনদেন হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাস, পরবর্তীতে কেএনএফ বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বিরোধী অভিযান, সর্বশেষ বন্যার ফলে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া পর্যটক আশানুরূপ না আসাতেই দিনদিন কয়েককোটি টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরবর্তী পর্যটন কেন্দ্র মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরিসহ সেসব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল সীমিত। পরিবার পরিজন নিয়ে আসলেও আগের মতন চাঙ্গা হয়ে উঠেনি পর্যটন কেন্দ্রগুলো। অন্যদিকে হোটেল-মোটেল দেখা মিলছে একই চিত্র। পর্যটক না আসার ফলে রুম ফাঁকাভাবে পড়ে আছে। অলসতা সময় পাড় করছেন হোটেলে কর্মচারী ও চান্দের গাড়ি চালকরা।

অরন্যে হোটেলে মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রথমে করোনা, তারপর কেএনএফ সর্বশেষ বন্যার কারণের পর্যটন শিল্পের ক্ষয়ক্ষতি ছেড়ে গেছে। বর্তমান পর্যায়ের পর্যটন এখন ধসের পথে। সরকার যদি পর্যটন শিল্পের ব্যবসায়ীদের প্রনোদনা ব্যবস্থা ও নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলে পূর্বের মতন আরো ব্যবসা চাঙ্গা হবে।

জীপ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতি নাসির উদ্দিন বলেন, চান্দের গাড়ি চালকরা বিভিন্ন স্থান থেকে কিস্তি নিয়েছে। তারা এখন পরিশোধ করতে পারছে না, পাশাপাশি গাড়ি ও চালাতে পারছে না। তাদের জন্য সরকার অনুদান ও প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়।

বান্দরবান হোটেল- মোটেল মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, পাহাড়ের বিভিন্ন সমস্যা কারণের পর্যটন শিল্পের এখম ধস নেমেছে। আগের মতন পর্যটক আশানুরূপ আগমন না হওয়াতেই হোটেল-মোটেল ব্যবসা এখন ধসে পথে। তাছাড়া পর্যটকদের মুল আকর্ষণ দেবতাকুম ও শিলবান্ধা ঝর্ণা। সেগুলো বন্ধ থাকার কারণের পর্যটকরা মুখ ফিরে নিচ্ছে। তাই সরকার প্রতি আহ্বান দ্রুত পাহাড়ের সমস্যা সমাধান করে আগের মতন পর্যটন স্পট খুলে দেওয়া জন্য আনুরোধ জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক, বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন