আলীকদমে সেচ ড্রেইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় চাষ হবে ১৫০০ একর জমি

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৫০০ মিটার সেচ ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ৭টি সেচ ড্রেইন নির্মাণ ও পাম্প মেশিন স্থাপন ও পাওয়ার টিলার সরবরাহকরণ প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ১৪ হাজার ৯৫৭ টাকা ৫.৫৪ পয়সা। ২০২৩ সালের অর্থবছরের জুন মাসের নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন হলে উপজেলার ১ হাজার ৫০০ একর জমিতে চাষাবাদ করতে পারবে উপজেলার স্থানীয় চাষীরা। এতে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হবে। পাল্টে যাবে পাহাড়ের কৃষি চিত্র। এই সেচ ড্রেইন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রায় ১ হাজারের অধিক কৃষক সুফল ভোগ করতে পারবে এবং সূচিত হবে কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং এমপি’র একান্ত প্রচেষ্টায় কাজটি বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলার যেসব স্থানে ৭টি সেচ ড্রেন নির্মাণ ও পাম্প মেশিন স্থাপন, পাওয়ার টিলার সরবরাহকরণ করা হচ্ছে সেগুলো হলো- আলীকদম সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ছফুরা ঘোনা পাড়ায় ব্যুরো চাষের সুবিধার্থে পাকা সেচ ড্রেইন নির্মাণ, ধান মাড়াই মেশিন, একটি পাম্প মেশিন ও একটি পাওয়ার টিলার সরবরাহ করণ। আলীকদম সদর ইউনিয়নের অন্তগর্ত আমতলী পূর্ব পালং পাড়ায় ব্যুরো চাষের সুবিধার্থে ব্যুরো স্কিমের পাকা সেচ ড্রেইন নির্মাণ, ধান মাড়াই মেশিন, ১টি পাম্প মেশিন ও ১টি পাওয়ার টিলার সরবরাহকরণ। আলীকদম উপজেলার অন্তরগত ৬নং ওয়ার্ডের কলারঝিরি জবিরাম ত্রিপুরা পাড়ার মৎস্য চাষ ও সেচ সুবিধার্থে বিসাইগ ত্রিপুরার জমি পার্শ্ব ঝিরিতে বাঁধ নির্মাণ। আলীকদম উপজেলার ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মংচিং হেডম্যান পাড়া এলাকায় বিলের ব্যুরো চাষের সুবিধার্থে ব্যুরো স্কিমের পাকা সেচ ড্রেইন নির্মাণ। আলীকদম উপজেলার ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড পাট্টাখাইয়া কৃষক সমবায় সমিতির ব্যুরো চাষের সুবিধার্থে ব্যুরো স্কিমের পাকা সেচ ড্রেইন নির্মাণ। ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ২নং ওয়ার্ডের মংচা পাড়ায় ব্যুরো চাষের সুবিধার্থে ব্যুরো স্কিমের পাকা সেচ ড্রেইন নির্মাণ, ধান মাড়াই মেশিন, ১টি পাম্প মেশিন ও ১টি পাওয়ার টিলার সরবরাহকরণ। আলীকদম উপজেলার ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের কৃষকদের ফসল উৎপাদনের সুবিধার্থে ব্যুরো স্কিমের জন্য পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ ও কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন সরবরাহকরণ।

এ ৭টি প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি আরো জানান, বর্ষা মৌসুম ব্যতীত বাকি সময়গুলোতে শুধু পানির অভাবে প্রচুর জমি পতিত থাকে। এসব জমি চাষের আওতায় আনার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সেচ ড্রেন নির্মাণ কাজে গুরুত্বারোপ করে এসব সেচ ড্রেন নির্মাণ করছে। ফলে কৃষি সেক্টরে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হবে। পাল্টে যাবে পার্বত্য কৃষি চিত্র। সূচিত হবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে এসব নির্মিত হচ্ছে। উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলীদের সার্বিক মনিটরিংয়ে এসব কাজ চলছে। বিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র নজরে আসলে সেচ ড্রেন ও পাম্প স্থাপনের গুরুত্বারোপ করে জমি চাষের আওতায় আনতে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।

আলীকদম উপজেলার উন্নয়ন বোর্ডের সাইট পরিদর্শক উক্যথোয়াই মার্মা জানান, আমাদের নিবিড় তদারকির মাধ্যমে দ্রুত গতিতে সেচ ড্রেইন নিমার্ণ কাজ চলছে।

২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আবাসিক পাট্টাখাইয়া কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি ও স্কিম ম্যানেজার মিজবাহ উদ্দীন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত সেচ ড্রেইনের আওতায় আবাসিক এলাকায় প্রায় ১৫০ একর সমতল জমির মালিক প্রান্তিক কৃষকরা। এই জমিগুলো সেচের আওতায় আসায় এখন কৃষকদের দৈন্যতা দূর হবে। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির প্রচেষ্টায় আলীকদম উপজেলায় কৃষি বিপ্লব ঘটছে। যার ফলে কৃষি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে জানান।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সেচ ড্রেন নির্মাণের ফলে পাহাড়ে অনাবাদি বিস্তৃত জমিগুলোতে বছরে তিন ফসলি ধান উৎপন্ন করা সম্ভব হবে।

২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চৈক্ষ্যং বিলের স্কীম ম্যানেজার মো. নাজিম উদ্দীন জানান, আমাদের এলাকায় প্রায় ৩০ একর সমতল জমির মালিক প্রান্তিক কৃষকরা। জমিগুলো সেচের আওতায় আসায় এসব কৃষকদের দৈন্যতা দূর হবে এখন। সেচ ড্রেনের কাজ শতভাগ হয়েছে।

২নং আলীকদম সদর ইউনিয়নে ৫নং ওয়ার্ড ছফুরা ঘোনা এলাকার মো. ছাবেরসহ কয়েক জনের সাথে আলাপকালে তারাও কাজের গুণগতমানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

পার্বত্য জনপদকে কৃষিসমৃদ্ধ করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পটি যুগান্তকারী উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেছেন আলীকদম সদর ইউপি নাছির উদ্দীন ও ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন। তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জনবান্ধব উন্নয়নে রেকর্ড করেছেন। সেচ সুবিধার ফলে পাহাড়ে আর বর্ষা নির্ভরতা থাকবে না। উপত্যকার সেচের আওয়ায় আনা জমিতে বছরে দুই থেকে তিন বার আউশ-আমন ধান চাষ করা যাবে। পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। প্রচুর উর্বর জমিও আছে। পানি সেচের সুবিধার ফলে প্রচুর পরিমাণে সবজি, ধান, ভুট্টা, কলা, পেঁপে, লেবু, পেয়ারা, আনারসসহ বিভিন্ন ফল ফসল উৎপাদন করা যাবে। সেচ সুবিধা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যায়নি এতোদিন। পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। প্রচুর উর্বর জমিও রয়েছে। কিন্তু সেচ সুবিধা না থাকায় বর্ষা মৌসুম ব্যতীত বাকি সময়গুলোতে শুধু পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে থাকত শত শত একর উর্বর পাহাড়ি জমি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদম, চাষ, জমি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন