জমজমাট প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড

fec-image

এবারের বিশ্বকাপে দু’দলের শুরুটা হয়েছিল একেবারেই ভিন্নরকম। অস্ট্রেলিয়াকে ৮৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু নিউজিল্যান্ডের। ওই এক ম্যাচে যে অস্ট্রেলিয়ার রানরেট কমেছিল, সেখান থেকে তার আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। যেটুকু দাঁড়িয়েছিল, তাতে এম ম্যাচের মাইনাস রানরেটই ছিটকে দিলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের।

অন্যদিকে চোখ ধাঁধানো থ্রিলারে ঠাসা ক্রিকেট উপহার দেয়া পাকিস্তানের শুরুটা ছিল খুবই হতাশাজনক। প্রথম দুই ম্যাচে পরাজয়। তাও কিভাবে? একেবারে শেষ বলে গিয়ে। ভারতের কাছেও হারতে হয়েছিল এভাবে, জিম্বাবুয়ের কাছেও। পরপর দুই ম্যাচে শেষ বলে এসে পরাজয় পাকিস্তানের বিদায়ই লিখে দিয়েছিলেন কেউ কেউ।

কিন্তু সেই পাকিস্তানই কি না আজ সেমিফাইনালের অন্যতম একটি দল। আজ যারা ফাইনালের লড়াইয়ে মাঠে নামবে টুর্নামেন্টটা দুর্দান্ত শুরু করা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

ক্রিকেট যে সত্যিই গৌরবময় অনিশ্চয়তার এক খেলা- সেটা বারবারই প্রমাণ করেন পাকিস্তানিরা। কখনো কখনো একেবারে ধ্বংসস্তুপে চলে যায় তারা। সেখান থেকেই আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে চলে আসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। পাকিস্তান ক্রিকেটের এই উত্থান-পতন যেন চিরায়ত। একইসঙ্গে চলতে থাকে। কখন যে তারা নিচে নামবে, আবার কখন উপরে উঠবে- সেটা বলা মুস্কিল।

এ কারণেই দলটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। যাদের নিয়ে কোনো ভবিষদ্বাণী করা যায় না। এমনকি যারা জুয়ার সঙ্গে জড়িত, তারাও বোধহয় পাকিস্তানকে নিয়ে বাজি ধরতে সাহস পায় না। তারা যে কবে কী করে বসবে- আগে থেকে আঁচ করা যায় না।

অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারালেও ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় নিউজিল্যান্ড। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় কিউইরা।

অন্যদিকে ভারত এবং জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পর পাকিস্তানের যখন সেমিফাইনাল খেলাটাই শঙ্কায় পড়ে যায়, তখন গ্রুপেই যেন একের পর এক নাটকীয়তা তৈরি হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানই উঠে গেলো সেমিতে। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো বাবর আজমদের। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টিকিয়ে রাখে আশা।

গ্রুপ পর্বের শেষদিন নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা যদি না হারতো তাহলে পাকিস্তানের আর সেমিতে ওঠা হতো না। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেদারল্যান্ডস হারিয়ে দেয়ার কারণে পাকিস্তানের সামনে সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। সুযোগ ছিল বাংলাদেশেরও। কিন্তু শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় টাইগাররা আর সেমিতে জায়গা করে নেয় বাবর আজমের দল।

তবে, পাকিস্তানের সামনে সাম্প্রতিক অনুপ্রেরণা হলো, গত মাসেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে, ক্রাইস্টচার্চে স্বাগতিকদের হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। ওই ম্যাচে কিউইরা প্রথমে ব্যাট করে সংগ্রহ করেছিল ১৬৩ রান। ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান করে ৫ উইকেটের ব্যবধানে জিতে যায় বাবর আজমরা।

যদিও পাকিস্তানের দুই সেরা ব্যাটার বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান রয়েছেন পুরোপুরি অফ ফর্মে। রিজওয়ান যা’ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪৯ রান করেছিলেন, বাবর আজম তো তাও করতে পারছেন না। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা দুর্দান্ত। গ্লেন ফিলিপস তো যেন স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন। কেনে উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়েরাও আছেন রানের মধ্যে।

তবে পাকিস্তানি বোলাররা গত কয়েক ম্যাচে নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছেন। শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম কিংবা শাদাব খানরা প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের দাঁড়াতেই দিচ্ছেন না। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, মিচেল সান্তনার, ইশ সোধিরাও কম যাচ্ছেন না। ফিল্ডিংয়েও কিউইরা দুর্দান্ত।

সব মিলিয়ে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে দ্রুপদি লড়াইয়ের অপেক্ষায় পুরো বিশ্ব। কে যাবে ফাইনালে? পাকিস্তান না নিউজিল্যান্ড? আপাতত জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২টায় ম্যাচ শুরু না হওয়া পর্যন্ত।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, সেমিফাইনাল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন